কিভাবে অনলাইনে জিডি করতে হয়
অনলাইনে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করার সুযোগ আধুনিক প্রযুক্তির একটি বড় সুবিধা, যা নাগরিকদের সময় এবং শ্রম সাশ্রয় করে, বিশেষ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থানাগুলোতে অনলাইনে জিডি করার প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে এটি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
২০২৩ সালে ডিএমপির থানাগুলোয় ৯ মাসে দুই লাখের বেশি জিডি রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই সেবার প্রয়োজনীয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতার প্রতিফলন।
অনলাইনে জিডি করার জন্য, নির্ধারিত ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হয়। এটি বিশেষ করে হারানো জিনিসপত্র, মোবাইল ফোন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, বা সাধারণ নিরাপত্তার বিষয়ে রিপোর্ট করতে অত্যন্ত কার্যকর।
যেভাবে অনলাইনে জিডি করা যায়, তা সহজ এবং নির্ভুল নির্দেশিকা অনুসরণ করে যে কেউ করতে পারেন। এটি কর্মজীবী মানুষ এবং সাধারণ নাগরিকদের জন্য সময় সাশ্রয়ী।
অনলাইনে জিডি করার এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের পুলিশের ডিজিটালাইজেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি নাগরিক সেবার মান উন্নত করেছে।
৯ মাসে ডিএমপির থানাগুলোয় দুই লাখ জিডি
৯ মাসে ডিএমপির থানাগুলোয় দুই লাখ জিডি রেকর্ড করা হয়েছে, যা নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এই বিপুল পরিমাণ জিডি রেকর্ডের পেছনে অনলাইনে জিডি করার সহজলভ্যতার বড় ভূমিকা রয়েছে।
ডিএমপি থানাগুলোয় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তাদের হারানো মোবাইল ফোন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, এবং অন্যান্য সাধারণ সমস্যা নিয়ে জিডি করে থাকেন, ৯ মাসে দুই লাখ জিডি রেকর্ড করা মানে গড়ে প্রতিদিন হাজারের বেশি জিডি দাখিল হয়েছে।
এটি প্রমাণ করে যে, মানুষের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য থানার সেবা গ্রহণ করছে, অনলাইনে জিডি করার সুবিধার কারণে মানুষের থানায় সরাসরি যাওয়ার প্রয়োজন কমে গেছে।
বিশেষত হারানো জিনিসপত্র সংক্রান্ত জিডিগুলো অনলাইনে দ্রুত এবং সহজে দাখিল করা যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি শুধু সময় বাঁচাচ্ছে না, বরং নাগরিক সেবাকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলেছে।
এই পরিসংখ্যান ডিএমপি থানাগুলোতে নাগরিক সেবার চাহিদা এবং সেবার মানের উন্নয়নের একটি প্রতিফলন। এটি প্রমাণ করে যে, ডিজিটাল সেবা মানুষের জীবনকে সহজ এবং কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
যেভাবে অনলাইনে জিডি করা যায়
অনলাইনে জিডি করার জন্য নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হয়, যা বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্য আবেদনকারীর নাম, ফোন নম্বর, এবং ইমেইল ঠিকানা প্রদান করে একটি পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হয়।
অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর, আবেদনকারী লগইন করে নতুন জিডি অপশনটি নির্বাচন করেন। তারপর সেখানে হারানো জিনিসপত্র বা সমস্যা সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করতে হয়। যেমন, হারানো মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে এর মডেল, আইএমইআই নম্বর, রং এবং হারানোর সময় ও স্থান নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়।
এরপর নির্ধারিত ফর্ম পূরণ শেষে আবেদনকারীকে তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যান্য প্রমাণপত্রের কপি আপলোড করতে হয়। সমস্ত তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করার পর ফরমটি সাবমিট করতে হয়।
সাবমিট করার পরে, আবেদনটি সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়। কর্তৃপক্ষ আবেদনটি যাচাই করে এবং আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা পাঠায়। প্রয়োজনে আবেদনকারীকে থানায় ডাকা হতে পারে।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, মানুষ ঘরে বসেই দ্রুত এবং সহজে জিডি করতে পারে, যা তাদের সময় এবং শ্রম সাশ্রয় করে।
জিডির প্রক্রিয়া আরও সহজ করা উচিত’
বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইন জিডি করার ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, এ প্রক্রিয়াকে আরও ব্যবহারবান্ধব এবং দ্রুততর করা প্রয়োজন।
অনলাইনে জিডি দাখিলের সময় অনেক ব্যবহারকারী প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হন, যেমন ওয়েবসাইটে ধীরগতি, তথ্য আপলোডের সীমাবদ্ধতা, বা ফর্ম পূরণের জটিলতা, এসব সমস্যা সমাধানের জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং ব্যবহারকারীর জন্য সহজ নির্দেশনা প্রদান করা জরুরি।
অনলাইন সেবা আরও দ্রুত এবং কার্যকর হওয়া উচিত, এছাড়া, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করতে স্থানীয় পর্যায়ে সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। ডিজিটাল সেবা বিস্তৃতকরণ এবং কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহারে অদক্ষ মানুষের জন্য একটি হেল্পলাইন চালু করা হতে পারে।
জিডির প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনতে এবং নাগরিকদের সময় সাশ্রয় করতে, একটি স্বয়ংক্রিয় ফিডব্যাক সিস্টেম চালু করা উচিত, যেখানে ব্যবহারকারীরা আবেদন দাখিলের পর পরবর্তী অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এই ধরনের উদ্যোগ নাগরিক সেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।